কিয়ামতের ১০টি বড় নিদর্শন আছে। যেগুলো একটা আরেকটার খুব নিকটে। যখন একটা সংঘঠিত হবে বাকিগুলো খুব দ্রুতই ঘটতে থাকবে। ছোট নিদর্শনগুলোর মধ্যে ব্যবধান শত শত বছর হতে পারে কিন্তু বড় নিদর্শনগুলো সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (স) বলেন: “বড় নিদর্শনগুলো একটা মালার পুঁতির মত, যখন সুতোটা কেটে দেয়া হয় সব পুঁতিগুলো পড়ে যাবে।”
১০টি নিদর্শনগুলো কি কি? এটা মুসলিম শরিফে আছে। ‘আন হুদাইফা বিন উসাইদ আল গিফারি (রা) বলেন, “রসুলুল্লাহ (স) আমাদের পাশে আসলেন এবং আমরা কথা বলছিলাম। তিনি (স) বললেন: তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো? আমরা বললাম: আমরা শেষ বিচারের দিন নিয়ে কথা বলছিলাম।
রসুলুল্লাহ (স) বললেন: এটা ততক্ষন পর্যন্ত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা ১০ টি নিদর্শন দেখতে না পার। তিনি বললেন, ধোঁয়া (আদ-দুখান), দাজ্জাল (আদ-দাজ্জাল), পশু (আদ-দা’য়াব্বা), পশ্চিম থেকে সূর্যোদয় (তুলু আশশামসি মিন মাগরিবিহা) ইসা ইবন্ মারইয়ামের (আ) আগমন (ওনুজুলা ‘ঈসা ইবন্ মারইয়াম), ই’য়াজুজ ও মা’য়যুজ, তিনস্থানে ভূমি কম্পন যাতে ভুমি ভিতরে দেবে যাবে, একটি পূর্বে, একটি পশ্চিমে ও একটি আরবে (ওয়া সালাসা তাখুসুফি, খাসফুন বি মাশবিক, খাসফুন বিল মাগরিব, খাসফুন বি জাজিরাতুল আরব) এবং সবশেষে একটা আগুন যেটা ইয়েমেন থেকে আসবে এবং যেটা লোকজনকে হাশরের দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে (ওয়া আখিরুজালিকা নারুন তাখরুজু মিনাল ইয়ামানি সতরুদুন্নাসা ইলা মাহসরাহিম)।” এগুলো হল কিয়ামতের দশটি নিদের্শন, কোনটা প্রথম নিদর্শন? আদ-দাজ্জাল? একটি হাদিস আছে যেটা এরকম-“শেষ বিচারের দিনের/কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল পশ্চিম দিক সূর্যোদয়।” যদিও হাদিসে আছে প্রথম নিদর্শন হবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, কিন্তু স্কলাররা বলেন যে, দাজ্জালই হবে প্রথম!! এটা তারা কিভাবে বলে, যেখানে এটা নিয়ে সরাসরি একটা সহিহ্ হাদিস আছে? তারা বলেন যে, কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর মধ্যে কিছু নিদর্শন আছে যেগুলো বিশ্বজগত পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এই নিদর্শনগুলোর মধ্যে প্রথমটি হবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, কারন পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় একটা অস্বাভাবিক মহাজাগতিক পরিবর্তন যা মহাবিশ্বে একটু ভিন্নতর কিন্তু অন্য নিদর্শনগুলো দাজ্জাল, ধোঁয়া, পশু এগুলো পৃথিবীতে হওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে পড়ে, এগুলো ঘটবে মহাবিশ্বের নিয়ম পরিবর্তনের আগেই। কিন্তু প্রথম পরিবর্তনের নিদর্শন হবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়। এরপর মহাবিশ্ব ভেঙে পড়তে থাকবে, মহাবিশ্বের নিয়ম নীতিগুলো ভেঙে যাবে। চাঁদের পতন হবে, নক্ষত্রের পতন হবে, আকাশ ছেদ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রথম পরিবর্তনের নিদর্শন হবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়। কিন্তু কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হবে আদ-দাজ্জাল।
এখন দাজ্জাল সম্পকে কিছু বলা যাক, দাজ্জালের আরবি নাম আল মাসিহ আদ-দাজ্জাল। দাজ্জালের নাম দুটো শব্দ নিয়ে গঠিত, মাসিহ ও দাজ্জাল। কওমে সুলমুহিত এর লেখক বলেন, ‘আল-মাসিহ’ এর ৫০ টি অর্থ হতে পারে! এটা খুবই সমৃদ্ধশালী শব্দ, ‘আল-মাসিহ’ এর একটা অর্থ হতে পারে ‘যেটা উপড়ে গিয়েছে’, দাজ্জালকে ‘আল-মাসিহ’ বলা হয় কারন তার একটা চোখ উপড়ে গেছে। ‘আল-মাসিহ’ মানে হতে পারে সেই ব্যক্তি যে সারা বিশ্ব ভ্রমন করে বেড়ায় এবং রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন যে দাজ্জাল ৪০ দিন পর্যন্ত সারা পৃথিবী ভ্রমন করে বেড়াবে। ‘আল-মাসিহ’ র আরেকটা অর্থ পরস্পর বিপরীত অর্থ ‘কাযযাব/ সিদ্দিক’ (মিথ্যাবাদী/সত্যবাদি) দুটোই হতে পারে! ঠিক আদমের যেমন দুটি বিপরীত অর্থ আছে একটি কালো ও অপরটি ফর্সা! আমরা ‘আদম’ শব্দটি দিয়ে কালো বা ফর্সা ত্বকেরই বর্ণনা দিতে পারি। ঠিক একইভাবে হাদিসে যখন ‘আদম’ ব্যবহার করা হয়েছে কালো ত্বক বোঝানোর জন্য, তেমনিই ঈসার (আ) ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়েছে ফর্সা ত্বক বোঝানোর জন্য। তাই ‘আল-মাসিহ’ মানে সত্যবাদী আবার এটার মানে মিথ্যাবাদীও। আল্লাহ সুবহানাহুয়া তা’য়াল দুইটি মাসিহ সৃষ্টি করেছেন, একজন আল-মাসিহ আদ-দাজ্জাল এবং আরেকজন আল-মাসিহ ঈসা ইবন্ মারইয়াম (আ)। যেখানে ঈসা (আ), যিনি সত্যিকারের মাসিহ (Messiah), আর দাজ্জাল যে মিথ্যুক মাসিহ (Messiah)। মাসিহ আরেকটা অর্থ ‘পাপ মোচনকারী’ যেটা ঈসা ইবন্ মারইয়াম (আ)। আরবি কিছু শব্দ যেগুলো আগে কোন বস্তুগত জিনিসকে বোঝাতো সেটা পরবর্তীতে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়। ‘দাজ্জাল আল-দায়িফ’ মানে উটকে কতরন(পিচ/কালো রং) দিয়ে রং করা, কোন কোন ক্ষেত্রে আরবেরা উটকে অসুস্থতা থেকে আরগ্য করার জন্য রং করত, কিন্তু এটা উটের বর্ণ পরিবর্তন করে দিত। সুতরা এটা কিছু (উটের প্রকৃত বর্ণ) গোপন করছে, এটা কিছুর বর্ণ পরিবর্তন করছে এবং এই অর্থ দাজ্জালের জন্য প্রযোজ্য কারন সে সত্য কথা বলছে না, সে কিছু লুকাচ্ছে, সে সত্য পরিবর্তন করছে। আপনি যদি ‘দাজ্জাল আল-হাদিদ’ শব্দটি ব্যবহার করেন যার অর্থ ‘স্বর্ণের প্রলেপ (ইলেকট্রোপ্লেটিং টাইপের)’, যদি আপনি কোন কিছুকে স্বর্ণ দিয়ে প্রলেপ করেন তবে এটাকে আরবিতে বলে ‘দাজ্জাল’। ইলেকট্রোপ্লেটিং এ যেমন নিকৃষ্ট ধাতু গুলোকে প্রলেপ দেয়া হয়, এই প্রলেপকে আরবিতে বলে ‘দাজ্জাল’!! এটা দেখতে স্বর্ণের মত, বাইরে থেকে দেখতে দারুন, কিন্তু অভ্যন্তরে কিছুই (স্বর্ণ) নেই!! এটাই দাজ্জাল কারন সে আপনাকে কিছু দেখাচ্ছে যা মনোমুগ্ধকর কিন্তু বাস্তবতা হল সেটা চরম নিকৃষ্ট!! সে দাবি করবে যে সে ‘ঈশ্বর’, সে সত্যবাদী, ন্যায়নিষ্ঠ; সে দাবি করবে যে সে পৃথিবীতে শান্তি আনছে কিন্তু আসলে সে খারাপ, আসলে সে অবিশ্বাসী!! আদ-দাজ্জাল শব্দটার আরো অর্থ হল প্রতারণ, মিথ্যাবাদী, ভন্ড; এসবগুলো শব্দই দাজ্জালের জন্য প্রযোজ্য। দাজ্জালকে কেন আল মাসিহ আদ-দাজ্জাল বলা হয়? কারন, আল-মাসিহ অর্থ মসিহ (Messiah) বা ত্রাতা, আর দাজ্জাল মানে ভন্ড, কারন ঈসা ইবন্ মারইয়াম (আ) হলেন সত্যিকারের মাসিহ, কিন্তু দাজ্জাল সে দাবি করবে যে সে ই ঈসা ইবন্ মারইয়াম (আ), সে হবে নকল মাসিহ, সে ঈসা (আ) সাজবে। সে হবে একজন ইমপস্টার/ভন্ড। এই কারনেই আল-মাসিহ আদ-দাজ্জাল মানে নকল/ভন্ড মাসিহ/ঈসা।
Post a Comment Blogger Facebook